জুমলা দিয়ে বাংলা ওয়েব সাইট তৈরী

নিজের জীবন বৃত্তান্ত রাখার জন্য তিন পাতার একটা তৈরী করা যতটা সহজ, হাজার হাজার ব্যবহারকারী বা সদস্যদের জন্য পরিবর্তনশীল বিষয়বস্তু নিয়ে একটা ডায়নামিক ওয়েব সাইট তৈরী করাটা তত সহজ নয়। ছোট আকারের সাইটের জন্য HTML বা বড়জোড় ফ্রন্টপেজের মতো একটা এডিটর ব্যবহার করা যথেষ্ট। কিন্তু একটা ডায়নামিক ওয়েব সাইট তৈরী করা এবং তা নিয়মিত আপডেট করা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। ডায়নামিক ওয়েব সাইট বলতে সেসব ওয়েব সাইট বোঝানো হচ্ছে যাদের বিষয় বস্তু নিয়মিত বা প্রায়ই পরিবর্তন হয়। খবরের কাগজ, পোর্টাল, ব্যবহারকারী ফোরাম ইত্যাদি ডায়নামিক সাইটের উদাহরন হতে পারে।
বড় বড় কোম্পানি তাদের ওয়েব সাইটের জন্য বিশেষ দল বা জনবল নিয়োগ করলেও, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিশেষের পক্ষে তাদের ওয়েব সাইট পরিবর্তন বা আপডেট করা অনেক সময় খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, অনলাইনের একটা খবরের কাগজকে প্রতিদিন আপডেট করতে হয়।
এ ধরনের কাজের জন্য বিশেষ সফটওয়ার থাকলেও তা বেশ দামী, অনেক সময় ব্যবহার করাও কঠিন। উপরন্তু একাধিক ব্যক্তি কোন সাইটে আপডেট করতে চাইলে এ ধরনের সফটওয়ার তাদের মধ্যে যোগাযোগের তেমন একটা সুবিধা দিতে পারে না। অনেক সময়, একাধিক রিপোর্টারকে একসাথে কোন খবরের সাইট আপডেটের কাজ করতে হয়।
অপর দিকে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী নতুন বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের ওয়েব সাইটকে বিভিন্ন দেশের জন্য স্থানীয় ভাষায় অনুবাদের প্রয়োজন হচ্ছে। এসব সাইট ভিজিটরের স্থান বুঝে বা জিজ্ঞেস করে তাকে স্থানীয় ভাষার সাইটে পাঠিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতেও ডেস্কটপ সফটওয়ার খুব একটা সুবিধা দিতে পারে না।
সিএমএস বা কনটেন্ট ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম হলো উপরোক্ত সমস্যাসমূহের সমাধান। সিএমএস এর জন্য কোন সুনির্দষ্ট সংজ্ঞা না থাকলেও, সি এম এস সফটওয়ার কী করতে পারে তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।

বাংলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবার আগে সিএমএস কী এ সম্পর্কে কিছু জানা যাক। কোন সংজ্ঞা না দিয়ে সহজ করে বললে-
সিএমএস কোন ওয়েব সাইটকে চালানোর উপযোগী একটি সফটওয়ার। যখন কোন ভ্রমণকারী ওয়েবসাইটের কোন কিছু দেখতে চান, তখন সিএমএস সফটওয়ার সেটা যোগান দেয়। পাশাপাশি, সিএমএস এর সুবিধা ব্যবহার করে ওয়েব মাস্টার প্রয়োজনে তার ওয়েব সাইটে বাড়তি তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি যোগ করেন। পুরোনো তথ্য ইত্যাদি আর্কাইভ করে রাখার সুবিধাও থাকে। নিবন্ধিত সদস্যসরা তাদের নিজেদের খবর, তথ্য ইত্যাদি জমা দিতে পারেন। কোন সম্পাদক তা অনুমোদন করলে তা প্রকাশ পাবে, এমন ব্যবস্থাও থাকে। এ ধরনের সব সুবিধা থাকে সিএমএস এর ব্যাক এন্ডে।
যে সব ওয়েব সাইটের বিষয় বস্তু প্রায়ই পরিবর্তিত হয়, সেসব ওয়েব সাইট দেখভাল করার জন্য সিএমএস এর চাইতে ভাল আর কিছু হতে পারে না। যে সব সাইট সদস্য ব্যস্থাপনা করে তাদেরও অনেক কিছু দিতে পারে সিএমএস।

বাংলার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়:
বাংলা লেখা বিষয়াদি রাখতে হলে কিছু বিশেষ দিকে নজর দেয়া দরকার.
প্রথমটি হলো এনকোডিং। ইউনিকোড বেশ জনপ্রিয় বলে সব সিএমএসই ইউনিকোড সমর্থন করছে। ইউনিকোড লেখা আবার একাধিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হতে পারে। utf-8 অধিকাংশ সময় দেখা যাচ্ছে।
UTF-8 মূলত আসকির সাথে অতিরিক্ত সংযোজন। এতে ইংরেজী অক্ষরগুলোর জন্য এক বাইট করে দরকার হয়। সে যুক্তিতে সব আসকি লেখা utf-8 কোডের মধ্যে পড়ে। আবার বাংলার ক্ষেত্রে প্রতিটি মূল বর্ণ তিন বাইট করে জায়গা নেয়। সংযুক্ত বর্ণ আরো বেশী। এতে কিছু সমস্যা হয়।
ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা ওয়েব পেজ দেখার জন্য কম্পিউটারে অন্তত একটি ইউনিকোড সমর্থিত বাংলা ফন্ট থাকতে হয়। ইন্টারনেটে এ রকম বেশ কিছু ফন্ট মাগনা পাওয়া যায়।
অধিকাংশ ব্রাউজার এখন বাংলা দেখাতে পারে যদি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে তার সাপোর্ট থাকে। উইন্ডোজ ২০০, এক্সপি, লিনাক্স, ম্যাক ওস সহ প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেমে এখন ইউনিকোড সমর্থন আছে। তবে বাংলার জন্য বিশেষ প্যাক ইনস্টল করতে হতে পারে। আবার, ব্রাউজারে এনকোডিং সেট করে দিতে হতে পারে অনেক সময়।
বাংলা অক্ষর প্রবেশ করানোর জন্য একটি বাড়তি সফটওয়ারের দরকার হয়। ওয়েব ভিত্তিক, পুরো সফটওয়ার, ইংরেজী ভিত্তিক ইত্যাদি একাধিক সফটওয়ার এখন সহজলভ্য।অভ্র, মাইক্রোসফটের আইএমই,ইত্যাদি।
ভালো বাংলা ওয়েব সাইট বলতে আমরা সে গুলোকে বোঝাতে চাই যেগুলো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন সার্চ করতে পারবে এবং W3C সমর্থিত যেকোন ব্রাউজারে দেখা যাবে। পিডিএফ, গিফ ইত্যাদি দিয়ে বাংলা অক্ষর দেখানোর বুদ্ধি এখন অচল।

জুমলা কী জুমলা ওপেন সোর্স ম্যাটার্সের তত্বাবধানে পিএইচপিতে লেখা একটি উন্মুক্ত সোর্সের সিএমএস সফটওয়ার। জুমলা ম্যাম্বো নামক আরেকটি সিএমস থেকে জন্ম দিয়ে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই দ্রুত জনপ্রিয়তার কারন হলো, প্রচুর সংখ্যক এক্সটেনশনের সহজলভ্যতা, নির্ভরযোগ্য সহায়তার জন্য সক্রিয় ফোরাম এবং সর্বোপরি জুমলা ব্যবহারে সহজতা। জুমলা.অরগ ও এর বিভিন্ন সাব সাইটে জুমলা সম্পর্কিত সব তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে খুব সংক্ষেপে জুমলার ফিচার নিয়ে কিছু বলছি-
ডেটাবেস চালিত- সাইটের সব লেখা, বিষয় বস্তু একটি ডেটাবেসে রক্ষিত হয়। সাইট ব্যাকআপ বা স্থানান্তর করতে এতে কোন সমস্যা হয় না। জুমলা মাইএসকিউএল ও পিজিএসকিউএল সমর্থন করে।
সব ধরনের বিষয়স্তু ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত থাকে। ক্যাটাগরিগুলো আবার বিভিন্ন সেকশনের অধীন। ব্লগ, আরএসএস ইত্যাদির জন্য রেডিমেড সেকশন ও ক্যাটাগরি প্রস্তুত করাই আছে।
সেকশন, ক্যটাগরি, বিষয়বস্তু একাধিক সম্পাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
লেখা সম্পাদনা করার জন্য ওয়ার্ডের মতো বিল্টইন এডিটর আছে।
সাইটের টেম্পলেট পুরোপুরি কাস্টমাইজ করা যায়। এ কারনে জুমলা দিয়ে যে কোন ধরনের ওয়েব সাইট তৈরী করা যায়। জুমলার সাথে দুটি টেম্পলেট দেয়া আছে, ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে অনেক টেম্পলেট পাওয়া যায়। সব চেয়ে ভাল ফলাফলের জন্য বাণিজ্যিক টেম্পলেটও ব্যবহার করা যায়।
ছবি বা যে কোন মাল্টিমিডিয়া কন্টেট এফটিপি বা ব্রাউজার দিয়ে আপলোড করা যায়। এসব ছবি, ভিডিও সাইটের যে কোন স্থানে লেখার মাঝে ব্যবহার করা যায়। মাল্টিমিডিয়া কন্টেটের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনার জন্য বাণিজ্যিক কম্পোনেন্টও পাওয়া যায়।
ফোরাম ও মতামত জরিপের সুবিধা।
আর্কাইভ ও অনুসন্ধান সুবিধা।
অ্যাপাশি সহ প্রায় সব ওয়েব সার্ভারে চলে।
ব্যবহারকারী ও তাদের গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
একাধিক ভাষার সমর্থন।

হাতে কলমে করুন:
জুমলা দিয়ে বাংলা ওয়েব সাইট বানাতে হলে জুমলা ছাড়াও কিছু এক্সটেনশনের প্রয়োজন হবে। সাইট ডেভেলপমেন্টের পুরো কাজটা করার জন্য আপনার কম্পউটারে একটা লোকাল সার্ভারের ব্যবস্থা করতে পারলে খুব দ্রুত কাজ করতে পারবেন। এ বিষয়ে এ সাইটে আরেকটি টিউটোরিয়াল আছে। লোকাল সার্ভারে সব কাজ শেষ করে তা ইন্টারনেট ওয়েব সার্ভারে আপলোড করতে পারেন।
১. জুমলাআপনার ওয়েব সাইটে শুধু বাংলা (একটি ভাষা) চাইলে আপনি জুমলা বিডি থেকে জুমলার লোকালাইজড সংস্করণ নামিয়ে নিন। আবার যদি সাইটের সব তথ্য বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় রাখতে চান তবে জুমলার মুল সাইট থেকে জুমলা নামান। এ ক্ষেত্রে আপনার জুমফিশ দরকার হবে। বাংলা জুমলা অথবা জুমলা যেটা নামান না কেন তা আনজিপ করে কোন একটা সার্ভারে (লোকাল বা ইন্টারনেট) রাখতে (বা আপলোড ) করতে হবে। জুমলা ইনস্টলের উপর একাধিক টিউটোরিয়াল আছে। সেখান থেকে সাহায্য নিন।
২. জুমফিশএকই ওয়েব সাইট একাধিক ভাষায় করতে চাইলে জুমলার সাথে প্রয়োজন হয় জুমফিশের। জুমফিশ আপনাকে সাইটের বিষয় বস্তু একাধিক ভাষায় অনুবাদ করার জন্য সুবিধা করে দেবে। কোন ভিজিটর যখন এরকম কোন সাইট দেখবেন, তখন তিনি তার পছন্দের ভাষা নির্বাচন করতে পারেন। আবার, আপনি ইচ্ছা করলে ভিজিটরের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নিয়ে তাকে যথাযথ ভাষায় সাইটের বিষয় বস্তু দেখাতে পারেন। জুমফিশ এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ইনস্টল করার জন্য এডমিন লগইন করে কম্পোনেন্ট হিসাবে ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টলের আগে কিছু কিছু ফোল্ডারের অনুমতি 777 করতে হতে পারে।
৩. JCEজুমলা ইনস্টলের পর পরই আপনার ওয়েব সাইট তৈরি হয়ে যাবে। বাকী থাকবে সাইটে বিভিন্ন বিষয় বস্তু যোগ করা। যারা ওয়ার্ডে একটু আধটু টাইপ করতে পারেন তারাও জুমলাতে নতুন বিষয় বস্তু যোগ করতে পারেন বা সম্পাদনা করতে পারেন। এ ধরনের সম্পদনার জন্য জুমলাতে ডিফল্ট হিসাবে TinyMCE থাকে। এর চেয়ে আরেকটু ভাল এডিটর হলো JCE. আমাদের এই সাইট থেকে (পুরোনো কপি) বা JCE এর সাইট থেকে আপনি JCE ও এর বিভিন্ন প্লাগইন নামাতে পারেন।
৪. SEFx সবাই ওয়েব সাইট বানান অন্যকে দেখানোর জন্য। আর নতুন কোন ওয়েব সাইট সাধারণত সবাই খুঁজে পায় সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যামে। কাজেই সার্চ ইঞ্জিন যাতে সহজে খুঁজে পায় এ ব্যপারটি সাইট তৈরী করার সময় মনে রাখা খুব জরুরী। জুমলা ডিফল্ট হিসাবে যে URL তৈরী করে তা খুব একটা সুবিধার না। এ কাজটি আরও ভালমতো করতে পারে SEFx নামক কম্পোনেন্ট। SEFx ছাড়া একই ধরনের আরও কম্পোনেন্ট আছে তবে কোনটিই (এ লেখা লেখার সময়)জুমফিশের সাথে কাজ করে না। কাজেই বাংলা ওয়েব সাইটের জন্য SEFx খুবই উপযোগী।
অনুবাদ কাজ:
একাধিক ভাষার ওয়েব সাইটে নতুন কোন বিষয় যোগ করলে তা নিজে থেকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হয়। (গুগলের অনুবাদ সার্ভিস ব্যবহার করেও কিছু ভাষার স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ করা যায়)। জুমফিশ নিজে কোন অনুবাদ করে না, তবে অনুবাদ কাজে সাহায্য করে। বাংলা ফোরামে এ নিয়ে ছোট্ট একটা টিউটোরিয়াল আছে।
সাইটের নিরাপত্তা:
একটা ওয়েব সাইট তৈরী ও তা হোস্ট করার জন্য বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। জুমলা ওয়েব সাইট তৈরীর কাজটা এত সহজ করে দেয় যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিষয়টা চাপা পড়ে যায়। একটা সাইটকে নিরাপদ রাখার জন্য অনেক করণীয় কাজ থাকে। জুমলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক জানার জন্য নিরাপত্তা ফোরাম হলো সবচেয়ে ভাল জায়গা। খুব সংক্ষেপে বললে, পিএইচপিএর রেজিস্টার গ্লোবাল অফ থাকা প্রয়োজন। জুমলা সাইটে কোন ফাইলের অনুমতি 666 বা 777 থাকা চলবে না। সাময়িক প্রয়োজনে কোন ফাইলের অনুমতি বা করলেও তা কাজ শেষে তুলে নিতে হবে। উদাহরন স্বরূপ, configuration.php তে কোন পরিবর্তন দরকার হলে তা 666 করে কাজ শেষে 644 করে দিতে হবে। নতুন কম্পোনেন্ট বা মডুল ইনস্টল করতে হলে component বা module ফোল্ডার 777 থাকা দরকার। ইনস্টল কাজ শেষে তা 755 রাখতে হবে। জুমলার নিত্য কাজের জন্য কিছু ফোল্ডার যেমন, cache এর অনুমতি 777 থাকতেই হবে, এক্ষেত্রে করার কিছু নেই। সর্বোপরি নিয়মিত বিরতিতে এবং কোন আপডেটের পর পরই সাইটের ব্যাকআপ রাখা।

0 comments:

Post a Comment